পাবনা জেলার নামকরণের ইতিহাস নিয়ে বেশ কয়েকটি জনশ্রুতি ও ঐতিহাসিক মতবাদ প্রচলিত আছে। নিম্নে এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য তত্ত্ব দেওয়া হলো:
১. পাবন বা পাবনি নামক ব্যক্তির নামানুসারে:
কিছু ইতিহাসবিদের মতে, প্রাচীনকালে এ অঞ্চলে পাবন বা পাবনি নামে একজন রাজা বা প্রভাবশালী ব্যক্তি শাসন করতেন। তার নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম "পাবনা" হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
২. পদুম্বা বা পদ্মা নদীর সাথে সম্পর্ক:
অন্য একটি মত অনুযায়ী, পদ্মা নদীর প্রাচীন নাম "পদুম্বা" বা "পাবনা" ছিল। এই নদীর নাম থেকেই জেলার নামকরণ হয়ে থাকতে পারে। পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত এই অঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
৩. ফার্সি শব্দ "পাবন" (প্রবাহিত জল) থেকে:
কিছু গবেষকদের মতে, ফার্সি শব্দ "পাবন" (যার অর্থ প্রবাহিত জল বা বন্যা) থেকে পাবনা নামের উৎপত্তি হতে পারে। পদ্মা ও যমুনা নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত এই অঞ্চলে প্রায়ই বন্যা হতো, তাই এই নাম দেওয়া হতে পারে।
৪. মুসলিম শাসকদের আমলে নামকরণ:
মুঘল বা সুলতানি আমলে এই অঞ্চলকে "পাবনা" নামে ডাকা হতো বলে কিছু ঐতিহাসিক দলিলে উল্লেখ আছে। এটি হতে পারে কোনো স্থানীয় ভাষা বা প্রশাসনিক নামের পরিবর্তিত রূপ।
৫. ব্রিটিশ আমলে আনুষ্ঠানিক নামকরণ:
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৩২ সালে পাবনাকে একটি পৃথক জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তখন থেকেই এটি আনুষ্ঠানিকভাবে "পাবনা জেলা" নামে পরিচিতি পায়।
ঐতিহাসিক প্রমাণ:
পাবনা অঞ্চলটি প্রাচীন বাংলার পুণ্ড্রবর্ধন অঞ্চলের অংশ ছিল বলে মনে করা হয়।
মধ্যযুগে এটি রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অধীনে ছিল।
ব্রিটিশ শাসনামলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়।
যেহেতু সঠিক উৎস নিয়ে নিশ্চিত ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না, তাই পাবনা নামের উৎস নিয়ে বিভিন্ন মতবাদই চালু রয়েছে। তবে স্থানীয় ইতিহাস ও লোককথায় পাবন/পাবনি বা পদ্মা নদীর সংযোগই সবচেয়ে বেশি আলোচিত।